Wednesday, July 17, 2013

Cancer (ক্যান্সার)

কিছু কথা

সারা বিশ্বে যত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তার শতকরা ১২ ভাগ ঘটে ক্যান্সার এর কারনে। উন্নত দেশ গুলোতে এটাকে মৃত্যুর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কারন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর তথ্য অনুসারে ২০০৮ সালে সারা  বিশ্বে ৭.৬ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সার এর কারনে মারা যায়। এর মধ্যে ৭০% মৃত্যু ঘটে কম এবং মধ্যম আয়ের দেশে। ক্যান্সারকে ১০০ এর ও বেশী রোগের সাধারন নাম ও বলা যায়। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার থাকলেও সব ক্যান্সারই মূলত কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারনে হয়ে থাকে। ক্যান্সার যেকোনো অঙ্গে খুব দ্রুত ছড়ায়, পরিনতিতে আক্রান্ত ব্যক্তি একপর্যায়ে মৃত্যু বরন করে। আমাদের দেশে স্তন, জরায়ু, অন্ত্রনালি, প্রোস্টেট, ফুসফুস, পাকস্থলি, ডিম্বাশয়, যকৃত, খাদ্যনালী, মুখগহ্বর, ত্বক প্রভৃতি ক্যান্সার প্রায়ই পরিলক্ষিত হয়।


কীভাবে হয়?

আমাদের দেহ কোটি কোটি কোষ দ্বারা গঠিত। কোষগুলো স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়, বিভাজিত হয় এবং মারা যায়। শৈশবে এই কোষ বৃদ্ধির হার অনেক বেশী থাকে এবং পূর্ণবয়স্ক কালে কোষগুলো সাধারণত আঘাতজনিত কারনে বা স্বাভাবিকভাবে মৃত কোষ এর স্থান পূরণ করে থাকে। ক্যান্সার এর শুরুতে কোষগুলো অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই কোষের বৃদ্ধির হার নরমাল কোষ থেকে আলাদা হয়। এটি পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং নতুন নতুন অস্বাভাবিক কোষ সৃষ্টি করতে থাকে। ক্যান্সার কোষ অনেক টিস্যুকে আক্রমন
করতে পারে এবং এমন কিছু করতে পারে যা স্বাভাবিক কোষ করে থাকেনা। এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও অন্যান্য টিস্যুকে আক্রমণের জন্য একে ক্যান্সার কোষ বলে।

প্রতিটি কোষে DNA থাকে, এবং কোষের সকল কর্মকাণ্ড এই DNA নিয়ন্ত্রণ করে। ক্যান্সার হলে এই DNA নষ্ট হয়ে যায়। স্বাভাবিক কোষে DNA নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় তৈরি হয় বা কোষ এর মৃত্যুর পর সেই কোষ স্বাভাবিক ভাবে প্রতিস্থাপিত হয়। ক্যান্সার হলে এই DNA পুনরায় তৈরি হয়না এবং কোষের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। কোষ নতুন নতুন কোষের সৃষ্টি করতে থাকে যা দেহের কোন প্রয়োজন নেই। এই নতুন কোষ প্রথম অস্বাভাবিক কোষের মত হয় এবং ওই কোষের মতই সব কিছু করতে থাকে।


যখন নতুন কোষ সৃষ্টি হয় বা প্রতিস্থাপিত হয় তখন ভুল বসত DNA এর ক্ষতি হতে পারে অথবা পরিবেশের কোন উপাদান এর কারনে। ধূমপান বা অনাবৃত অবস্থায় রোদে গেলে ও এই সমস্যা হতে পারে। তবে কোন কারনে DNA এর ক্ষতি ঘটেছে তা শিওর হউয়া প্রায় অসম্ভব।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যান্সার কোষ টিউমার গঠন করে। টিউমার ২ ধরনের, একটি হল বিনাইন বা ভালাবোলা টিউমার এবং অপরটি হল ম্যালিগন্যান্ট বা বিপদজনক টিউমার। শেষের টিউমারকে ক্যান্সার বলা হয়।

ক্যান্সার কোষ খুব সহজেই দেহের যেকোনো অঙ্গে যাতায়াত করতে পারে। এটি ঘটে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে। সময়ের সাথে টিউমার গুলো টিস্যু এর স্থান দখল করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে মেটাসট্যাঁটিস।


কেন হয়?

অধিকাংশ ক্যান্সার কেন হয় তা এখন সথিকভাবে নিরুপন করা যায়নি। যেগুলো জানা গেছে তার মধ্যে রয়েছে,

- বংশগত কারনেঃ বাবা, মা, খালা এদের মধ্যে থাকলে সন্তানদের হতে পারে বা হউয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে।
- ধূমপানঃ ধূমপানের ফলে ফুসফুসের ক্যান্সার হয়। পান, জর্দা, সাদা পাতা, গুল ইত্যাদি ওড়াল ক্যান্সার, জিহ্বার ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
- আহারঃ অ্যালকোহল বা অস্বাভাবিক হারে খাওয়া দাওয়ার জন্য ক্যান্সার হতে পারে। অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেলে ক্যান্সার এর ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
- রেডিয়েশনঃ কোন জায়গায় সেক দিলে বা সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি ত্বকের ক্যান্সার করে থাকে। যেমন,
 * চেরনোবিল, জাপানের নাগাশিকর পারমাণবিক বিস্ফোরণে অনেক বছর পর এখনও অনেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।
 * পাথর বা স্টোন কিডনি, পিত্তথলির ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
 * সারভিক্স বা ব্রনের ক্রনিক ইনফেকশন থেকে জরায়ুর ও বোনের ক্যান্সার হয়।
- অন্যান্যঃ রাসায়নিক বা কেমিক্যাল এজেন্ট যেমন- এনিলিন ডাইয়ে মুত্রথলির ক্যান্সার হয়। খাদ্দ্যে ব্যবহৃত ফরমালিন পাকস্থলীর ক্যান্সার করে। কিছু ভাইরাস যেমন হেপাটাইটিস বি ও ছি, কিছু পরজীবী এর কারনেও হয়ে থাকে।


উপসর্গ সমূহ


- অনেকদিন ধরে শরীরের কোন অংশের চুপচাপ উপদ্রবহীনভাবে ছোট একটি টিউমার বা চাকা হটাৎ বড় হলে, ব্যথা করলে।
- শরীরের ছোট একটি তিল হটাৎ বড়, গাড় কালো রঙ হলে, চুলকালে বা রক্তক্ষরণ হলে।
- ফুসফুসে কাশি ৪ সপ্তাহের বেশী হলে।
- ওজন কমে গেলে। ৪০ বছরের বেশী বয়স্কদের ঝুঁকি বেশী।
- মলদ্বার দিয়ে রক্ত বের হলে, শরীর দুর্বল হয়ে গেলে, ব্যথা হলে, মল ত্যাগ এর অভ্যাস এর হটাৎ পরিবর্তন হলে।
- মহিলাদের বয়সের কারনে মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে কিন্তু নতুন করে আবার রক্তপাত হলে।
- স্তনে টিউমার।
- হাড়ে ব্যথা, ফোলা হটাৎ পড়ে গিয়ে ফ্রাকছার হলে সতর্ক থাকতে হবে।
- পোড়া ঘা ভাল হওয়ার পর আবার হলে এবং না শুকালে।


রোগ নির্ণয়

উপরের উপসর্গগুলো দেখা দিলে অবশ্যই জরুরী ভিত্তিতে ক্যান্সার সার্জন বা যেকোনো সার্জনের শরণাপন্ন হতে হবে।


ক্যান্সার প্রতিরোধে করনীয়

ক্যান্সার প্রতিরোধে নিচের টিপস গুলো মেনে চলা জরুরী,

- পান, সুপারি, জর্দা, তামাক পাতা, ধূমপান, মদ্যপান বর্জন করা।
- ব্যক্তিগত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম করে শরীরকে সচল রাখা।
- সব ধরনের তেজস্ক্রিয়তা এড়িয়ে চলা।
- পেশাগত কারনে কোন রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকলে প্রয়োজনীয় প্রটেকশন নিয়ে কাজ করা।
- সময়মত টিকা গ্রহন করা।
- রঙিন খাদ্য ও পানীয়, ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ এবং ভেজাল ও নিম্নমানের কসমেটিকস বর্জন করা।
- পর্যাপ্ত উদ্ভিজ্জ খাবার এবং আঁশযুক্ত খাবার গ্রহন।
- খাবারে অতিরিক্ত লবন বর্জন।
- বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা বা এড়িয়ে চলা।
- যেসব অসুখ থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেগুলোর দ্রুত চিকিৎসা করা।

No comments:

Post a Comment