Monday, July 15, 2013

Hepatitis B (হেপাটাইটিস বি)

কিছু কথা

হেপাটাইটিস বি একটি মারাত্মক রোগ। ১৯৬৫ সালে এক অস্ট্রেলিয়া আদিবাসীর রক্তে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়। বর্তমানে পৃথিবীতে ৩০-৩৫ কোটি মানুষ এই রোগের জীবাণু দীর্ঘমেয়াদী ভাবে বহন করে আসছে এবং প্রতি বছর প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ এই জটিলতায় মারা যায়। মূলত হেপাটাইটিস বলতে লিভার ফুলে যাওয়াকে বোঝায়। এর ফলে দেখা যায় লিভার ইনফেকশন, সঙ্গে ইমিউন সিস্টেম এর অবনতি এবং এক পর্যায়ে অকার্যকর হয়ে পরে লিভার। ভাইরাস এর কারনের হয় বলে একে ভাইরাল হেপাটাইটিস ও বলে। হেপাটাইটিস ৫ টি ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। ভাইরাস গুলো হচ্ছে,  হেপাটাইটিস-এ,  হেপাটাইটিস-বি,  হেপাটাইটিস-সি,  হেপাটাইটিস-ডি,  হেপাটাইটিস-ই। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, আফ্রিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, প্যাসিফিক আয়ারল্যান্ড সহ দক্ষিন আমেরিকা এর কিছু কিয়দংশে এ রোগের সংক্রমন খুব বেশী।


হেপাটাইটিস-বি কি?

 হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এর কারনে হয় বলে একে  হেপাটাইটিস বি বলা হয়। একে সিরাম হেপাটাইটিস ও বলে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রাথমিকভাবে যকৃত কোষে প্রতিলিপি নির্মাণ দ্বারা যকৃত ফাংশনে হস্তক্ষেপ করে। এ রোগের ২ টি অবস্থা আছে। একটি হল অ্যাকিউট
অপরটি হল ক্রনিক।  অ্যাকিউট হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সঠিক চিকিৎসায় খুব দ্রুত সেরে ওঠে। কেউ কেউ সারা জীবন এতে আক্রান্ত হলেও লিভারে কোন রোগ দেখা নাও দিতে পারে। কিন্তু ক্রনিক এর ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ বিপরীত। অত্যন্ত বিপদজনক অবস্থায় থাকে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত রোগীরা। এ রোগ যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। তবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীর বয়স ৫০ এর নিচে। এমন কোন প্রতিষেধক এখন আবিষ্কৃত এখন হয়নি যা  অ্যাকিউট হেপাটাইটিস বি কে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি তে পরিনত হতে রধ করবে। ক্রনিক হেপাটাইটিস বি হল লিভার সিরোসিস এর অন্যতম প্রধান কারন। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৫-১০ ভাগ রোগীরা ক্রনিক ইনফেকশন এর শিকার।


কীভাবে ছড়ায়?

এই রোগ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়ায়। তবে সব থেকে মারাত্মক বিষয় হল, ক্রনিক হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত রোগী খুব সহজে মরেনা কিন্তু খুব দ্রুত এরা ভাইরাস সংক্রমন করতে পারে।

- রক্ত সঞ্চালন  এর সময় রক্তদানকারীর রক্তে এই ভাইরাস থাকলে তা গ্রহন কারীর শরীরে ঢুঁকে পড়ে।
- একাধিক ইনজেকশন ব্যবহার করলে।
- আক্রান্ত রোগীর ব্যবহিত সূচ, ডাক্তারী যন্ত্রপাতি সুস্থ ব্যক্তির দেহে ব্যবহার করলে।
- জৈবিক মিলনের সময় প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে।
- মানুষের লালা, প্রসাব, শুক্র ও যৌন রোগের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়।
- মায়ের দেহে এই ভাইরাস থাকলে নবজাতের দেহে ও তা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

তবে মনে রাখতে হবে, স্তনদান করলে, হাত মিলালে কিংবা পানি বা খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়না। রোগীর ব্যবহার করা চশমা, জামা-কাপড় ইত্যাদি এর মাধ্যমে ও ছড়ায় না।


লক্ষণ সমূহ

ভাইরাস আক্রমণের প্রায় ১-৩ মাসের মধ্যে লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে,
- লিভারে ব্যথা করা
- খাদ্যে অরুচি
- দুর্বলতা (কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয়)
- জ্বর ও বমি
- পেট ব্যথা
 - শরীর চুলকানো ( এটি সকল হেপাটাইটিস রোগের লক্ষণ)
- জন্ডিস
- প্রসাব চা এর মত কালো হয়ে যাবে
- পায়খানার রঙ ধূসর হবে
- রক্তস্বল্পতা
- ওজন কমে যাওয়া


প্রতিরোধের উপায় সমূহ

যেকোনো রোগ চিকিৎসা করার থেকে প্রতিরোধ করা উত্তম। হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধের জন্য রয়েছে ভ্যাকসিন। যা ৪ টি ডোজ এর মাধ্যমে ১২ মাস ধরে দেওয়া হয়।

যাদের জন্য এই ভ্যাকসিন জরুরী

- ১৯ বছর বয়সী যে কোন ব্যক্তির জন্য
- যে সকল নবজাতকের মা এই রোগে আক্রান্ত (২০-৯০% ঝুঁকি কমানো সম্ভব)
- স্বাস্থ্য পরিচর্যায় নিযুক্ত যেকোনো ব্যক্তি
- কিডনি ডাইয়ালাইসিসকৃত রোগী
- রক্তের অস্বাভাবিক জটিলতায় আক্রান্ত ব্যক্তি
- ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ভ্রমণকারী
- জেলে সাজাপ্রাপ্ত আসামি
- মাদকদ্রব্য গ্রহণকারী
- ক্রনিক লিভার ডিজিজ এ আক্রান্ত ব্যক্তি
- বহু বা অসামঞ্জস্য পূর্ণ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনকারী ব্যক্তি

পরামর্শ

সাধারণত এই রোগের প্রথম লক্ষণ জ্বর। অনেকেই একে সাধারন জ্বর মনে করে থাকেন এবং হেপাটাইটিস বি এর কথা মনেই আনে না। তাই ওপরের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তার এর পরামর্শ নিতে হবে। সব থেকে ভাল হয় নিজে সচেতন ও নিরাপদ থাকা। 

No comments:

Post a Comment