Sunday, July 21, 2013

Typhoid (টাইফয়েড)

কিছু কথা

টাইফয়েড রোগটির সাথে কম বেশী আমরা সবাই পরিচিত। বাংলাদেশে এর প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। চিন্তার বিষয় হল, শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। সারাবিশ্বে বছরে টাইফয়েডে প্রায় ৩ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ মারা যায়। প্রতি ১,০০০ শিশুর মধ্যে বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২০ জন শিশু যা কিনা অন্যান্য বয়সীদের তুলনায় ৯ গুণ বেশি। ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চারা টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি এবং এর ৮৫% শিশুই আক্রান্ত হয় ২-৪ বছরের মাঝে। সময়মত চিকিৎসা না করালে কোন অঙ্গ স্থায়ী ভাবে অকার্যকর ও হয়ে পড়তে পারে। এমনকি পেটের ভেতর রক্তক্ষরণ ও ছিদ্র হয়ে যেতে পারে।


টাইফয়েড কি?

 টাইফয়েড বা টাইফয়েড জ্বর হল এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ। এই রোগ  সালমোনেলা টাইফি নামে ব্যাক্টেরিয়ার কারনে হয়। এটি পানিবাহিত রোগ। এটা সংক্রমিত (সংক্রমিত ব্যাক্তির মল ও মূত্র দ্বারা) খাদ্য বা জল পানের দ্বারা ছড়ায়। এই ব্যাকটেরিয়া শুধু মানুষের দেহে বাস
করে। রক্ত প্রবাহ এবং অন্ত্রের নালীর মধ্যে এরা অবস্থান করে। সদ্য এই রোগ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তি ও এই ব্যাকটেরিয়া কিছু পরিমাণে বহন করতে পারে। অসুস্থ ব্যক্তি এবং বাহক উভয়ের মল এর দ্বারা এটি পরিবেশে উন্মুক্ত হয়। এই ব্যাকটেরিয়া কোনভাবে মানুষের দেহে প্রবেশ করলে ১-৩ সপ্তাহ এর মধ্যে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।


লক্ষণ সমূহ

প্রথম সপ্তাহে অল্প জ্বর আসতে পারে, সাথে মাথা ব্যথা এবং পেটে ব্যথা ও হতে পারে।
দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রচণ্ড জ্বর আসে, বুকে গোলাপি দাগ দেখা যায় সেই সাথে মাথা ও পেটের ব্যথা বাড়তে থাকে।
তৃতীয় সপ্তাহে এই জ্বর আরও অনেক জটিল রোগের সৃষ্টি করতে পারে।

সারাংশ করলে নিম্নোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা যায়

- প্রচন্ড জ্বর
- মাথা ব্যথা
- ডাইরিয়া বা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য
- বুকের উপর গোলাপি দাগ
- লিভার বা প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া
- পেটে ব্যথা


প্রতিরোধ

স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন দেশী-বিদেশী সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক বাংলাদেশে টাইফয়েড চিকিৎসার চেয়ে এর প্রতিরোধের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি। ড. ক্রিস্টোফার নেলসন যিনি স্যাবিন ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটের টাইফয়েড সেক্রেটারিয়েটের পরিচালক, বললেন, টাইফয়েডের কারণে অজস্র মৃত্যু এবং অসুস্থতা প্রতিরোধে ভ্যাকসিনই সর্বোত্তম পন্থা। টাইফয়েড রোগের টিকা কয়েক বছরের জন্য কার্যকর হতে পারে। দুই বছর বয়সের নিচে এ টিকা প্রযোজ্য নয়। এছাড়া নিম্নোক্ত কিছু উপায়ে আমরা এই রোগ প্রতিরোধ করতে পারি।

- বাইরের দূষিত ও অপরিষ্কার খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলা
- সর্বদা বিশুদ্ধ পানি পান করা
- ফলমূল, শাকসবজি ও তাজা খাবার ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে।
- রান্না ও থালাবাসন ধোয়ার কাজে পুকুরের পানি বা অপরিষ্কার পানি ব্যবহার করা যাবে না।
- ভালভাবে ফুটিয়ে রান্না করতে হবে এবং গরম গরম অবস্থায় খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- শৌচাগার ব্যবহারের পর এবং খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং শিশুদের স্বাস্থ্যকর জীবনাচরণ এ অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।


পরামর্শ

লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ডাক্তার এর পরামর্শ নিতে হবে। টাইফয়েড জ্বর আন্টিবায়টিক ব্যবহার করে সারানো যায়। সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হয়, তা না-হলে আবারও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে জ্বর কমে গেলেই ওষুধ বন্ধ হয়ে যাবে না, মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে হবে।

No comments:

Post a Comment