Saturday, July 20, 2013

Jaundice (জন্ডিস)

কিছু কথা

জন্ডিস আমাদের দেশে খুবই পরিচিত রোগ। শিশুদের এই রোগ হতে বেশী দেখা যায়। এটি যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। জন্ডিস এর কারনে মৃত্যু হতে পারে কি পারেনা তা নির্ভর করে কি কারনে জন্ডিস হয়েছে তার ওপর। তবে খুব ভয়াবহ অবস্থা হলে মৃত্যু ও হতে পারে।  একে আগে পাণ্ডুরোগ বলা হত। ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ডিসের একটি প্রধান কারণ হল ভাইরাস ঘটিত হেপাটাইটিস।


জন্ডিস কি?

প্রকৃতপক্ষে, জন্ডিস (Jaundice) কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। ত্বক, মিউকাস মেমব্রেণ এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়াকে জন্ডিস বলে। জন্ডিস মূলত হয় লিভারে সমস্যা হলে।শরীরে বিলিরুবিন নামে হলুদ রঞ্জক পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে এরকম হয়। বিলিরুবিনের স্বভাবিক পরিমাণ < ১.0-১.৫ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার। এর দ্বিগুণ হলে বাইরে থেকে বোঝা যায়। কিছু ক্ষেত্রে প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হয়ে যায়।  সাধারণত: আমাদের শরীরে প্রতিদিন ১% পুরনো
লোহিত কণিকার স্থলে নতুন লোহিত রক্ত কণিকা স্থানান্তরিত হয়। পুরনো লোহিত রক্ত কণিকা গুলো বিলিরুবিন উৎপন্ন করে, যা পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কোন কারণে শরীর থেকে বিলিরুবিন না বের হতে পারলে, এই অধিক বিলিরুবিনের জন্য জন্ডিস হয়।

মনে রাখতে হবে, জন্ডিস কোন রোগ নয়, বরং এটি হলো রোগের লক্ষন। যেসব রোগে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেসব রোগে জন্ডিস দেখা দেয়। যেমন লিভারে হেপাটাইটিস ভাইরাসের আক্রমন; মদ, অতিরিক্ত প্যারাসিটামল বা বিষাক্ত মাশরুম সেবনে লিভার ড্যামেজ, কিছু রোগে লিভারে অতিরিক্ত আয়ন জমে লিভার ড্যামেজ, শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কোষগুলোর অতি সক্রিয় হয়ে গিয়ে লিভার কে আক্রমন অথবা জন্মগত ত্রুটির কারণে লিভারের সঙ্গে অন্ত্রের সংযোগ স্থলে কোনপ্রকার বাধা। যদি কোন কারণে শরীরের লোহিত রক্তকনিকা অতিরিক্ত ভাংগতে থাকে তাহলেও জন্ডিস দেখা দেয়। এগুলো ছাড়াও ক্যান্সার, গলব্লাডারে সমস্যা ইত্যাদিতেও জন্ডিস দেখা যায়।

অধিকাংশ শিশুর জন্মের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন জন্ডিস হয়। একে সদ্যজাত শিশুর স্বাভাবিক জন্ডিস(Physiologic Jaundice of the Newborn) বলে।  কিন্তু কিছুক্ষেত্রে বিলিরুবিনের ঘনত্ব খুব বেশী হলে এটি তাড়াতাড়ি শুরু হয় বা বেশীদিন চলে (স্বাভাবিক, সাধাণতঃ ৭-১০দিন) যা অস্বভাবিক।

জন্ডিস সাধারণত ৩ প্রকার।
১। প্রিহেপাটিক
২। হেপাটিক
৩। পোস্ট  হেপাটিক


লক্ষণ সমূহ


- ত্বক ও চোখ হলুদ হওয়া
- হালকা জ্বর
- দুর্বলতা
- হলুদাভ ত্বক ও চোখ
- অরুচি
- বমি বমি ভাব থাকা বমি হওয়া
- মাংসপেশী বা জয়েন্ট এ ব্যথা
- কালচে মুত্র
- কাদার মত মল
- চুলকানি


প্রতিরোধের উপায়

- যকৃতের কার্যকারিতার সাথে জন্ডিসের কারণ জড়িত তাই যকৃত এবং এর কার্যকারিতা যেন ভালো থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে
- সুষম খাবার খেতে হবে, অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না
- মাদক, ধূমপান, শিরাপথে নেশা দ্রব্য নেওয়া পরিহার করতে হবে
- জন্ডিসের টীকা নিতে হবে
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। অনেকেই মনে করেন অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে জন্ডিস হয়। এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারনা।


পরামর্শ

শিশু এবং বড়দের ত্বক, চোখ ইত্যাদি হলুদ হয়ে গেলো জন্ডিস হয়েছে বলে মনে করতে হবে এবং দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন,

- রক্ত পরীক্ষা
- যকৃতের কার্যকারিতা এবং কোলেস্টরল পরীক্ষা
- প্রোথোম্বিন টাইম (Prothrombin time)
- পেটের আল্ট্রাসাউন্ড
- প্রস্রাব পরীক্ষা
- যকৃতের বায়োপসি

যেহেতু এটি অন্য রোগের কারনে হয়ে থাকে তাই রোগের ধরণ, মাত্রা, রুগীর বয়সের উপর জন্ডিসের চিকিৎসা নির্ভর করে।

- ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে ঔষধ সেবন এবং অন্যান্য বিষয় মেনে চলতে হবে
- শিশুদের ফিজিওলজিকাল জন্ডিসের (Physiological Jaundice) ক্ষেত্রে কিছু দিনের লাইট থেরাপী দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে
- নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে বিলিরুবিনের মাত্রা মারাত্মক আকার ধারণ করলে রক্ত পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে

জন্ডিস রোগীর বাড়ীতে যত্ন

- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং তাজা ফল খেতে হবে
- হাতের নখ কেটে ছোট রাখতে হবে
- রুগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে
- খাবার-দাবার সবসময় ঢেকে রাখতে হবে
- বমি বমি ভাব দূর করতে রান্নায় বেশী মসলা ব্যবহার করা যেতে পারে
- রান্না সহ বিভিন্ন কাজে টিউবয়েলের পানি ব্যবহার করতে হবে
- তেল জাতীয় খাবার কম খাওয়া বা রান্নায় কম তেল ব্যবহার করা
- অনেকে এ সময় মাছ-মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকে যা একেবারেই অনুচিত। এতে শরীরে প্রোটিন এর অভাব ঘটে যা আরো নানা ধরণের জটিলতা বয়ে আনতে পারে
- ঘুমানোর জন্য ঘুমের ওষুধ সেবন করা যাবেনা আবার অতিরিক্ত ঘুমানোও যাবেনা
- স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে
- মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকা

বি. দ্র. ঃ ভেষজ ওষুধে কি কি উপাদান আছে তা অনেক ক্ষেত্রেই পরীক্ষিত না। জন্ডিসে লিভার এতটাই নাজুক থাকে যে এতে থাকা কোন উপাদান লিভারের ক্ষতি করে ফেলতে পারে।


No comments:

Post a Comment