Tuesday, July 2, 2013

Smoking (ধূমপান)

কিছু কথা

ধূমপান, এমন একটি অভ্যাস যা একবার শুরু হলে সহজে দূর করা যায়না। এতে রয়েছে নিকোটিন, যার ফলে ধূমপায়ীরা ধূমপানে আকৃষ্ট হয়। নিকোটিন হেরোইন বা অন্যান্য আসক্তিকর ওষুধের মত একটি নেশা জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ।অনেকে স্টাইল এর জন্য ধূমপান করেন আবার অনেকেই আছেন যারা মানসিক ক্লান্তি দূর করার জন্য ধূমপান করেন। এক এক জন এক এক কারনে ধূমপান করে । কেউ কেউ শুরু করে কারন তাদের কোন পরিবারের সদস্য বা বন্ধু ধূমপান করে তাই। প্রতি ১০ জন ধূমপায়ী এর ৯ জনই ১৮ বছরের আগে ধূমপান শুরু করে। এবং তাদের অধিকাংশই কখনো ভাবেনি যে তারা কখনো ধূমপানে আকৃষ্ট হবে। WHO এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী তামাক গ্রহণকারীদের প্রায় ৫০% অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর শিকার হয়। প্রতি বছর প্রায় ৬ মিলিয়ন মানুষ এই তামাক গ্রহনের ফলে মারা যায় যার মধ্যে ৬০০,০০০ জন অধূমপায়ী কিন্তু প্রভাবের শিকার। প্রায় ১ বিলিয়ন ধূমপায়ী মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র দেশ এ বাস করে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালে মৃত্যুর পরিমান দাঁড়াবে প্রায় ৮ মিলিয়ন।


কীভাবে ক্ষতি করে?

ধূমপান মানুষের দেহের কি পরিমান ক্ষতি সাধিত করে তা নির্ভর করে ওই ব্যক্তি কি পরিমান ধূমপান করে তার ওপর। যারা বেশী ধূমপান করে তাদের ক্ষতির পরিমান বেশী, তবে যারা কম ধূমপান করে তাদের ক্ষতির পরিমান ও একেবারে কম নয়। কারন নিকোটিন খুব দ্রুত শরীর ও মনের ওপর ক্রিয়া করে। শুধু নিকোটিন নয়, ধূমপানের সময় প্রায় ৪০০০  রাসায়নিক পদার্থ দেহে প্রবেশ করে। এইসব রাসায়নিক পদার্থ শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের ক্ষতি করে থাকে।
এর মধ্যে ২৫০ টি বিভিন্ন রোগ সৃষ্টির জন্য পরিচিত এবং ৫০ টি ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য সুপরিচিত। এর মধ্যে বেশী ক্ষতিকারক Tar, Carbon monoxide, Hydrogen cyanide, Free radicals, Metals, Radioactive compounds।

আমাদের শরীর অনেক স্মার্ট। শরীরে কোন বিষাক্ত কিছু ধুঁকলে এটি প্রতিরক্ষার প্রস্তুতি নেয়। ধূমপানের এই বিষাক্ত ফলাফল ধীরে ধীরে ঘটতে থাকে। ধূমপান বা আংশিকভাবে দগ্ধ জৈবপদার্থে  carcinogens (ক্যান্সার এজেন্ট) থাকে। এর ফলে ফুসফুসের ক্যান্সার বা অন্যান্য রোগ হতে পারে। এবং এটি প্রায় ২০ বছর ও সময় নিতে পারে। এছাড়া carcinogenic pyrolytic নামের রাসায়নিক পদার্থ দেহে প্রবেশ করে যা DNA এর ওপর প্রভাব ফেলে, এবং DNA এর রুপান্তর ঘটায়। Benzopyrene কোষের রুপান্তর ঘটাতে বা কোষ নষ্ট করে ফেলে। এই কোষ পরবর্তীতে ক্যান্সার কোষে পরিনত হয়।


ক্ষতিকারক প্রভাব সমূহ

পুরুষ এবং মহিলা ধূমপায়ীরা জীবনের গড়ে ১৩.২ - ১৪.৫ বছর হারায়। এছাড়া,

- ট্রাকিয়া বা গলা ব্যাথা করা
- শ্বাসকষ্ট
- ফুসফুসের জ্বালা এবং ক্ষতি
- ফুসফুসের সংক্রমন, যেমন কাশি।
- ফুসফুসের বায়ু নির্গমন পথের স্থায়ী ক্ষতি
- রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে
- রক্তের শিরার সংকোচন
- রক্ত কম অক্সিজেন বহন করে
- রক্ত প্রবাহ কমে যায়, বিশেষ করে হাতের এবং পায়ের আঙ্গুলের
- স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে
- ইমিউন সিস্টেম ঠিকমত কাজ করে না
- নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণ আরও প্রবণ হয়।
- অসুস্থতা সারতে সময় লাগে।
- রক্তে প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহের মাত্রা কমে যায় (যেমন ভিটামিন সি)
- হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়
- পেট জ্বালা করা বা বিরক্তি এবং প্রদাহ
- পরিপাক নালীতে আলসার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে
- গন্ধ এবং স্বাদ ক্ষমতা হ্রাস
- অন্ধত্বের ঝুঁকি উচ্চ হারে বৃদ্ধি পায়

পুরুষদের ক্ষেত্রে

- শুক্রানুর সংখ্যা কমে যায়
- বিকৃত শুক্রাণু এর হার বেড়ে যায়
- শুক্রাণু থেকে জেনেটিক ক্ষতি

নারীদের ক্ষেত্রে

- ঋতু বা মাসিক চক্রের অনিয়ম
- এক থেকে দুই বছর আগেই রজোবন্ধ হয়ে যায়
- গর্ভাশয়ের ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়ে
- ৩৫ বছরের বেশী বয়সী মহিলাদের যারা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেয়ে থাকে তাদের হার্ট অ্যাটাক এর ঝুকি বেড়ে যায়।

নবজাতক শিশুর ওপর প্রভাব

- অকাল গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়ে
- ওজন কম, যা শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। ওজন হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, সাবালকত্ব, ডায়াবেটিস এর সাথে জড়িত
- চিড় তালু এবং চিড় ঠোঁট

দীর্ঘমেয়াদী ধূমপান দ্বারা ঘটিত রোগ

- ক্যান্সার
- ফুসফুসের রোগ, যেমন ক্রনিক ব্রংকাইটিস এবং এমফিসেমা
- করোনারি আর্টারি সংক্রান্ত রোগ, হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক
- পাচনতন্ত্র এর আলসার
- অস্টিওপরোসিস এবং নিতম্ব ফাটল।

No comments:

Post a Comment